মন্ত্রিত্ব ছাড়তে আপত্তি নেই: নৌমন্ত্রী


ডেস্ক রিপোর্টঃ সড়ক দুর্ঘটনা কমানোর ব্যাপাকে কার্যকর ভূমিকা পালন করছেন বলে দাবি করেছেন নৌপরিবহন মন্ত্রী শাজাহান খান। বলেছেন, রাজধানীতে বাস চলাচলে যে বিশৃঙ্খলা রয়েছে, সেটি তারও বিবেচনায় আছে এবং তারা কঠোর কিছু সিদ্ধান্ত নিতে যাচ্ছেন।
মন্ত্রী এমনও বলেন, তিনি পদত্যাগ করলে দুর্ঘটনা কমবে, এমন প্রমাণ দিতে পারলে মন্ত্রিত্ব ছেড়ে দিতে আপত্তি নেই।‘দুর্ঘটনা ঘটলেই অনেকেই আমার পদত্যাগ দাবি করেন। আমি তাদেরকে বলব, আপনারা যদি কেউ প্রমাণ দিতে পারেন বা বলতে পারেন, হ্যাঁ, আপনি (নৌমন্ত্রী) গেলেই সব সমস্যার সমাধান হবে, আমার চলে যাওয়াতে তো কোনো অসুবিধা নেই।’
সোমবার সচিবালয়ে এক প্রতিক্রিয়ায় এ কথা বলেন নৌ মন্ত্রী। আগের দিন রাজধানীর বিমানবন্দর সড়কে দুই কলেজ শিক্ষার্থীর মৃত্যুর পর নতুন করে সমালোচনায় পড়া মন্ত্রী এই কথা বলেন।
সড়ক পরিবহন নৌ মন্ত্রীর দায়িত্ব নয়। তবে তিনি পরিবহন মালিক সমিতির একজন নেতা এবং সেই সুবাদে শ্রমিক নেতাও বটে। পরিবহন শ্রমিকদের মধ্যে তার ব্যাপক প্রভাব আছে বলে ধারণা করা হয়। সড়ক দুর্ঘটনায় এক চালকের যাবজ্জীবন কারাদণ্ডের প্রতিবাদে দেশজুড়ে পরিবহন ধর্মঘট ডেকেও সমালোচিত হয়েছিলেন শাজাহান খান।
তবে রবিবারের দুর্ঘটনার পর নৌমন্ত্রী সমালোচনায় পড়েন হাসিমুখে বক্তব্য দিয়ে। সচিবালয়ে অন্য একটি অনুষ্ঠানে মন্ত্রীর কাছে দুর্ঘটনায় মৃত্যুর বিষয়টি নিয়ে প্রশ্ন করছে তিনি হাসতে হাসতে বলেন, কালকের অনুষ্ঠানে সেটা প্রাসঙ্গিক কি না। পরে অবশ্য তিনি বলেন, যার যতটুকু অপরাধ, ততটুপু শাস্তি তারা পাব।
২০১১ সালেও নৌ মন্ত্রী ব্যাপক সমালোচনার মুখে পড়েন গরু ছাড়ল চিনলেই লাইসেন্স দেয়া যায় মর্মে বক্তব্য দেয়ায়। এর আগে নাগরিক সমাজের পক্ষ থেকে চালকদের লাইসেন্স দেয়ার ক্ষেত্রে ন্যূনতম শিক্ষাগত যোগ্যতা বেধে দেয়ার শর্ত দেয়া হয়েছিল, যেটার জবাব দিতে গিয়ে তিনি এ কথা বলেন।
সেই ঘটনা স্মরণ করে মন্ত্রী বলেন, ‘এর আগেও শহীদ মিনার থেকে অনেকেই আমার এবং তৎকালীন যোগাযোগ মন্ত্রীর পদত্যাগ দাবি করেছিলেন। কিন্তু পদত্যাগ সমস্যার সমাধান নয়।’
সড়ক দুর্ঘটনা কমিয়ে আনতে পারবেন-এ বিসয়ে আত্মবিশ্বাসী নৌমন্ত্রী। এ ক্ষেত্রে তিনি নৌপথে দুর্ঘটনা কমিয়ে আনার উদাহরণ টানেন। বলেন, ‘আগে অনেক লঞ্চডুবি হত, শত-শত মানুষ নিহত হয়েছে। আমি তো প্রমাণ করেছি, বিগত সাড়ে তিন বছরে একটাও লঞ্চ ডুবে নাই। এটা যদি আমি এখানে করতে পারি, আমি আশা করি, সড়ক-পরিবহন সেক্টরেও আমার প্রচেষ্টা দিয়ে দুর্ঘটনা কমিয়ে আনতে পারব।’
রাজধানীতে বাসের বিশৃঙ্খলা নিয়ে কাজ করছি
ঢাকায় বাসে চরম বিশৃঙ্খলা রয়েছে, এ বিষয়ে একমত শাজাহান। বলেন, ‘এটা নিয়ে সিরিয়াসলি আমরা সিদ্ধান্ত নিচ্ছি যে, আমাদের করণীয় কী। আমরা কিছু কঠোর ব্যবস্থা নেব।’
আর এই কঠোর হওয়ার মধ্য দিয়ে অপ্রত্যাশিত দুর্ঘটনা কমাতে পারবে বলেও আশাবাদী নৌমন্ত্রী। বলেন, ‘শুধুমাত্র বিআরটিএ আর সরকারকে দায়িত্ব দিলে হবে না। আমরা নিজেরাও কিছু দায়িত্ব পালন করতে চাই।’
মন্ত্রী ‘গর্বের সঙ্গে’ বলেন, ২০১৩ সালে গার্মেন্টস এ জ্বালাও-পোড়াও-ভাঙচুর এর বিরুদ্ধে ব্যবস্থার দায়িত্ব প্রধানমন্ত্রী তাকেই দায়িত্ব দিয়েছিলেন। আর তিনি তাতে সফল হয়েছেন।
‘২০১৩ সালের পরে আর কোথাও গার্মেন্টস-এ জ্বালাও-পাড়াও হয়েছে?’- এমন প্রশ্ন রেখে মন্ত্রী বলেন, ‘তাহলে আমি এ উদাহরণ দিতে চাই, আমি এখানে আছি বলে অনেক দুর্ঘটনা কমানোর ব্যাপারে কার্যকর ভূমিকা পালন করছি।’
বাসের অসম প্রতিযোগিতা গ্রহণ করব না
রবিবার বিমানবন্দর সড়কে বাস চাপায় দুই কলেজ শিক্ষার্থীর মৃত্যুর পেছনে বাসের যাত্রী তুলতে দুই বাসের প্রতিযোগিতা দায়ী ছিল, এই বিষয়টিও জানতে পেরেছেন মন্ত্রী। বলেন, ‘গতকালকের বিষয়টি খুবই দুখঃজনক। এ ঘটনায় যারা দোষী তাদের বিরুদ্ধে কঠোর ব্যবস্থা নেওয়া উচিত।’
‘প্রতিযোগিতা করতে যেয়ে এটা ঘটেছে বলে পত্র-পত্রিকায় শুনেছি। এই অসম প্রতিযোগিতা আমরা গ্রহণ করব না। আমি গতকালকেও একট কথা বলেছি, সেটা আজকেও বলছি, যারা দোষী তাদের বিরুদ্ধে কঠোর ব্যবস্থা নিলে মালিক-শ্রমিকদের পক্ষ থেকে কোনো প্রতিবাদ করতে আমরা রাজি নই। আমরা এর দায়-দায়িত্ব নেব না।’
জাবালে নূর পরিবহনের বাসটি নৌমন্ত্রীর একজন স্বজনের বলে খবর বের হয়েছে গণমাধ্যেমে। এ বিষয়ে জানতে চাইলে তিনি বলেন, ‘আমি জানি না ঠিক, আমি জোর দিয়ে বলছি না। এটাতো একটা কোম্পানি। সেখানে ১০ বা ২০ জন মালিক থাকতে পারে। সেখানে আমার কোনো আত্মীয় আছে কি না তা আমার জানা নেই।’
পরিবহন শ্রমিকরা দেশের স্বার্থেই কাজ করে
পরিবহন শ্রমিকরা দেশের স্বার্থে কাজ করে জানিয়ে নৌমন্ত্রী বলেন, ‘শান্তি প্রতিষ্ঠার জন্য যখন প্রধানমন্ত্রী আহ্বান করলেন, আগুন সন্ত্রাসের বিরুদ্ধে প্রতিরোধ গড়ে তুলুন। তখন কিন্তু এই সড়ক-পরিবহন শ্রমিকরাই প্রতিরোধ গড়ে তুলেছিলেন, গাড়ি চালু রেখেছিলেন।’
‘এর জন্য ৯২ জন চালক-হেলপারকে জীবন দিতে হয়েছে। তাই শান্তি প্রতিষ্ঠায় সড়ক-পরিবহন শ্রমিকদের অবদান আছে।’
বিএনপি-জামায়াত জোটের আন্দোলনের সময় সহিংসতার কথা তুলে ধরে নৌ মন্ত্রী বলেন, ‘মালিকদের এক হাজারের মত গাড়ি পুড়িয়েছে, তিন হাজারের মত গাড়ি ভাঙচুর করেছে। তাহলে একটি দেশের প্রতি মালিক-শ্রমিকদের যদি দায়-দায়িত্বই না থাকে, তাহলে আমরা এ ঝুঁকিটা নেব কেন? এই ঝুঁকির মধ্যে আমি কিন্তু যেখানেই গাড়ি পুড়িয়েছে সেখানেই ছুটেছি। বিভিন্ন জায়গায় ছুটে-ছুটে গাড়িগুলো চালু রাখার ব্যবস্থা করেছি।’

SHARE THIS

Author:

Etiam at libero iaculis, mollis justo non, blandit augue. Vestibulum sit amet sodales est, a lacinia ex. Suspendisse vel enim sagittis, volutpat sem eget, condimentum sem.

0 comments: