ফরাসি বিপ্লবের নেপথ্য কারিগর

আঁতোয়া গ্রিজম্যান আর‌ কিলিয়ান এমবাপে–কে নিয়ে যতটাই মাতামাতি হয়েছে, ততটাই আড়ালে থেকেছেন স্যামুয়েল এমতিতি। ক্যামেরুন বংশোদ্ভূত এই ফুটবলারের বয়স যখন আট, সেদেশের ফুটবল কিংবদন্তি রজার মিল্লা স্বয়ং অনুরোধ করেছিলেন যাতে ফ্রান্সের প্রবাস ছেড়ে ক্যামেরুনে ফিরে আসেন এমতিতি–র মা–বাবা। এমতিতি যাতে ক্যামেরুনের হয়ে খেলেন, সেটাই ছিল রজারের লক্ষ্য।
ভাগ্যিস সেদিন রজারের অনুরোধ সবিনয়ে প্রত্যাখ্যান করেছিলেন এমতিতি দম্পতি। না হলে কার গোলে দুরন্ত ছন্দে থাকা বেলজিয়ামকে হারিয়ে রাশিয়া বিশ্বকাপের ফাইনালে পৌঁছে যেত ফ্রান্স?‌
শুরুতে দাপট দেখিয়েছিল ফ্রান্সই। কিন্তু মিনিট পাঁচেক কাটতে না কাটতেই জাঁকিয়ে বসে বেলজিয়াম। একটা সময় তো পায়ে বলই পাচ্ছিলেন না ফরাসিরা। বেলজিয়াম আর ফ্রান্সের বল পজেশনের অনুপাত তখন ৬৫–৩৫!‌ দলকে একেবারে সামনে থেকে নেতৃত্ব দিচ্ছিলেন অনবদ্য এডেন অ্যাজার। আর এদিকে একের পর এক সুযোগ নষ্টের প্রদর্শনীতে নেমেছিলেন দুই দলের ফুটবলাররা। ১৩ মিনিটে সহজ সুযোগ নষ্ট করলেন এমবাপ্পে।
১৫ মিনিটে সুযোগ নষ্ট অ্যাজারের। তবে এবারের বিশ্বকাপে প্রায় প্রতি ম্যাচেই যে কাউন্টার অ্যাটাকে ভর করে বিপক্ষের নাভিশ্বাস তুলেছে বেলজিয়াম, সেটা দেখা যাচ্ছিল এই ম্যাচেও। পাশাপাশি মারুয়ান ফেলাইনির উচ্চতাকে কাজে লাগাতে বারবার এরিয়াল বল বাড়িয়ে যাচ্ছিলেন কেভিন দে ব্রুইন, এডেন অ্যাজাররা। যদি সেট পিসে গোল করতে পারেন ছ’‌ফিট তিন ইঞ্চির এই তারকা!‌
বারবার পোজিশন পাল্টে চেষ্টারও ত্রুটি করেননি ফেলাইনি। কিন্তু গোল ‌হল কই?‌ মাঝখান থেকে ৫১ মিনিটে আঁতোয়া গ্রিজম্যানের কর্নার শট থেকে এমতিতির নিঁখুত হেডে ম্যাচের ভবিষ্যৎ লেখা হয়ে গেল ওখানেই। খেলার মোড়ও ঘুরে গেল ওখান থেকেই। বারবার কাউন্টার অ্যাটাকে ভর করে বেলজিয়ামের মিডফিল্ডে চাপ দিয়ে বেশি সংখ্যক ফুটবলারদের ডিফেন্সে নামানোর কাজ করছিল ফ্রান্স। সেটা যে যাতে অ্যাজাররা আক্রমণে না উঠতে পারেন, সেটা বুঝতেই পারলেন না রোমেলু লুকাকুরা!‌
পরিসংখ্যান বলছে, যতই ম্যাচ গড়িয়েছে বলের দখলের শতকরা হিসাবে বেলজিয়ামই এগিয়ে থেকেছে। ম্যাচের শেষেও বেলজিয়ামের দখলে বল শতকরা ৬৪ শতাংশ!‌ আসলে বেলজিয়ামকে ফরাসি কোচ দিঁদিয়ে দেশঁ–র চাল ভাবতে বাধ্য করেছেন, ম্যাচ বোধহয় তাদের হাতেই আছে। যেকোনো মুহূর্তে গোল করে সমতা ফেরানো যাবে। কিন্তু সেটা যে সহজ হবে না, সেটা যতক্ষণে ভিনসেন্ট কোম্পানি–রা বুঝতে পারলেন, ততক্ষণে দেরি হয়ে গিয়েছে। হতাশায় বিশ্রী ফাউল করে ৬৩ মিনিটে কার্ড দেখলেন অ্যাজার। বল পজেশনের খুড়োর কল দেখিয়ে দেশঁ বেলজিয়ামকে বুঝতেই দিলেন না ফুটবলে শেষ কথাটা গোলই বলে, বলের দখল নয়।
বুধবার ইংল্যান্ড–ক্রোয়েশিয়া সেমিফাইনালে যেই জিতুক, যারাই পড়ুক ফ্রান্সের সামনে, দেশঁ–র এই মগজাস্ত্রই কিন্তু তাদের সামনে বিরাট বড় চ্যালেঞ্জ হতে যাচ্ছে।

SHARE THIS

Author:

Etiam at libero iaculis, mollis justo non, blandit augue. Vestibulum sit amet sodales est, a lacinia ex. Suspendisse vel enim sagittis, volutpat sem eget, condimentum sem.

0 comments: